কৃষ্ণকলিকে আমি দেখেছি , না ময়নাপাড়ার মাঠে নয় ,সবুজ ঘাসের চাদরে নয়
তাকে দেখেছি অভিশপ্ত প্রযুক্তি নগরীতে বাষ্পীয় দানবের গুহার মধ্যে
কৃষ্ণকলিকে আমি দেখেছি , না পাখীদের কলরবে নয় ,মেঘবালিকার খেলায় নয়
তাকে দেখেছি গনগনে বাস্তবের রোদে পুড়ে যাওয়া কঠিন জমিতে |
তার পরনে তখন জংলাপারের শাড়ি ছিলনা , শিথিল কবরীতে করবীর রাগ ছিল না
যেটা ছিল সেটা সস্তা সুতোয় বোনা এক দুয়োরানীর ্রুপকথা
যেটা ছিল সেটা তেল চটচটে চুলে হেরে যাওয়ার মিথ্যে লড়াইটা
যদিও ঠোঁটের কোনে তখনও লেগে থাকা আলগা শৈশব বোধহয় হার জিতের ভেদাভেদ বোঝেনি
অস্ত্য গামী সারল্য তখনও শেষ হাসিটা হেসেই চলেছে , দিবা রাত্রির প্রভেদ ঠিকঠাক চিনে নিতে শেখেনি |
আমি তাকে চিনেছি , চিনেছি যখন চারিদিকে একরাশ কেরানীর অর্থনৈতিক পরাধীনতার বিদ্রোহী চিৎকার
তাকে একবার দেখেই বুঝেছি , বুঝেছি মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন আবেগের বেচাকেনা গুলোর মাঝে
যেখানে রোদ্দুর বলতে কাঁচা পয়সার ঝলকানি , মেঘের অর্থ ক্ষুধার্তের হাহাকার |
সে কিশোরী নয় , যুবতীও নয় , বার্ধক্য আসতে এখনও অনেক যুগ বাকি
তবে কি সে নারি?কিন্তু তাই বা বলি কি করে , নারী তো কেবল সে শুধু শরীরে
অন্তরের বিরাজমান বালিকাটাকে অতো কোলাহলেও বাড়বার চোখে পড়েছিল
বাইরে তখন কড়া রোদ , তবু সে ঘামেনি , ঘেমে নেয়ে হতাশার বন্যায় ভেসে যায়নি
স্বল্পায়ু স্থবিরতা ভেতরের জমে থাকা চঞ্চলতাটার গভীরতা সময়ের তুলাদণ্ডে বাড়বার মাপছিল |
কিন্তু চঞ্চল তার পিছু ছেড়েছে কই , ঠিক গুটি গুটি পায়ে এসে জায়গা নিয়েছে দারিদ্র্য মোড়া কোলে
আরেকটা শৈশব সেখানে ওঠা নামা করছিলো , অবাধ্যতায় এলো চুলগুলো আরও এলোমেলো করে দিচ্ছিল
মুহূর্তের জন্যেও মনে হয়নি , সে এর জন্মদাত্রী , বরং ফেলে আসা সরলতা যেন দশমাস দশদিন পরে
আবার ফিরে এলো , ক্ষুদ্র হাতের জগত ধরতে চাওয়ার চেষ্টাগুলো অনেক চেনা শতাব্দী প্রাচীন
দীর্ঘকাল ধরে ওরা এই ব্যর্থ চেষ্টাটা করেছে , কখনও জেতেনি ,তাইতো ওরা আজও জন্মায়
বংশগতির ধাড়া অব্যাহত রাখার তাগিদে , প্রত্যেকবার বড় হয় আরেকবার হারতে হবে বলে |
কৃষ্ণকলি সেটা জানে , সে জানে চেতনার বিকাশ খুব অবাধ্য , বোঝালেও বুঝতে চায়না
প্রতিটা কড়া শাসনে সে নিজেকেই বাড়বার শাসন করে , এই পৃথিবীর অন্তিম উদাহরণ হয়ে
বন্ধ করে দিতে চায় এতদিন ধরে চলে আসা অভিযোজনের ধারাটা
তবু দুপাশে চলমান পৃথিবী ওরা দুজনে একটা শরীরে দেখেছে
চিন্তারা মিলেমিশে গিয়ে সরলরেখায় চলেছে ,কৌতূহল দুজনেরই , একজনের জানার আরেকজনের বোঝার
দুয়ে একে এক হয়ে একসাথে মিলিয়ে যাওয়ার , মিলিয়ে যাওয়া বিগতজন্মে , মিলিয়ে যাওয়া সদ্য পুরাতন শরীরে , মিলিয়ে কালের অতল সলিলে |
কৃষ্ণকলিকে আমি দেখেছি , নানা রুপে নানা ভাবে , কতগুলো অপলক মুহূর্তে
কৃষ্ণকলিকে আমি বুঝেছি তার না বলা কথায় , জীর্ণ অবয়বের প্রতিটা ভঙ্গিমায়
ধূসর রঙ্গিন সিঁথির অন্তিম শিথিলতায় , শুধু রচয়িতা অনুপস্থিত , অনেক খুঁজেছি
কিন্তু সে ছিল না , তার দায় কেবল জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ,সেখানে সে সঠিক , সফল
জ্বলন্ত উদাহরণ টা আরও বেশি করে জ্বলে উঠে সেটা বারংবার বলেছে
তার দায় শৈশব কে টেনে হিঁচড়ে বাড় করে নিয়ে এসে সজোরে আছাড় মারা
শাসনের উজ্জ্বল দাগগুলো সেদিন যেনও আরও বেশী করে আলোকিত হয়েছে |
কালের গতিতে এসময়ও শেষ হয় , তারা দুজনে একজন হয়ে ফেরার রাস্তা ধরে
জানি কোনও সবুজ ঘেরা গ্রাম কোথাও অপেক্ষা করছেনা ,হয়তো কোনও মিথ্যে উপনিবেশে
আবার তাকে হারিয়ে যেতে হবে , মুহূর্তের আবেগগুলো সেখানে বাড়বার ভাঙবে
বিষাক্ত দংশনে মৃত্যু হবে নিষ্পাপ কলিগুলোর , পড়ে থাকবে শুধু কাঠের গুঁড়িটা
কৃষ্ণকলি আবার হয়তো হারবে , অনেক দূরে কোনও নাম না জানা শ্মশানে শেষ হাসি হাসবে
নিষ্ঠুর বাস্তবের অশ্লীল উচ্ছ্বাসটা ............।।
পশ্চিমবঙ্গ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন